মাসুদ পারভেজ, রৌমারী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা থেকে একজন ‘মানবিক ইউএনও’র বিদায়ে সর্বমহলে প্রশংসিত। যিনি সরকারের দেওয়া দ্বায়িত্ব পালনে তৎপর থেকে অসহায় গরিব দুখী মানুষের পাশে থেকে সর্বখন সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অফিসার্স ক্লাবে সকালের দিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় অনুষ্ঠান করা হয়। তিনি ৩১ তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা আল ইমরান। নিজ গুণে যোগদানের কিছু দিনের মধ্যেই সর্বস্থরের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। উপজেলাবাসী একজন শিক্ষাবান্ধব, কর্মঠ, জনবান্ধব ও দক্ষ অফিসারের বিদায়ে সর্বমহলে প্রশংসিত। গত ২৮ মার্চ সরকারি ভাবে ইউএনও থেকে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। বর্তমানে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রিপল আরসি সিনিয়র সহকারি সচিব পদে যোগদান করেছেন।
অপরদিকে একইদিনে ভার: উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দ¦ায়িত্ব নিয়েছেন সহকারি কমিশনার(ভ‚মি) আশরাফুল আলম রাসেল। এরআগে তিনি উলিপুর উপজেলায় সহকারি কমিশনার(ভ‚মি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আল ইমরান ২০১৯ সালের ২২ অক্টবর মাসে রৌমারী উপজেলায় যোগদান করেছিলেন। যোগদান হতে রৌমারী উপজেলার মানুষকে সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এ সময়ে তিনি সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে জনগণের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে উপজেলার সর্বস্থরের মানুষ জানান। করোনা মহামারীর মধ্যেও উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।
করোনার প্রাদূর্ভাব মোকাবেলায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মুকতার হোসেন বলেন, আমার ২০ বছরের চাকুরীকালে যতগুলো চৌকস, সৎ, ন্যায়পরায়ন ইউএনও পেয়েছি তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান তারা বলেন, তিনি জনবান্ধব মানুষ ছিলেন। অল্প সময়ের মধ্যে উপজেলার সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মন জয় করে ছিলেন। নিম্ন শ্রেণী থেকে উচ্চ পদস্থ লোক খুব সহজে তার কাছে যেত পারত। তার কাছে কোনো ভেদাভেদ ছিলোনা। কোন ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষনিক ভাবে সেখানে ছুটে যেতেন এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতেন।
রৌমারীর চৌধুরী গওহরউজ্জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা বলেন, ওনি শিক্ষাবান্ধব ইউএনও ছিলেন। অসহায় দরিদ্র ছাত্র/ছাত্রীদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করতেন। বিরক্ত, অবহেলা বা ব্যস্ততা দেখাতেন না কাউকে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কভারেজ করতে গিয়ে অল্প সময়ে যেটুকুু লক্ষ্য করেছি, তা হলো, উনি খুব স্থির ও ধৈর্য্যশীল মানুষ।
রৌমারী সরকারি কলেজ ইংরেজি সহকারি অধ্যাপক, ইংলিশ লেঙ্গুয়েজ ক্লাব ও প্রয়াস নাট্য সংঘ সাধারন সম্পাদক এম আর ফেরদৌস বলেন, প্রশাসনিক দিক থেকে তিনি কঠোর ছিলেন। মানবিক দিক থেকেও মানবিয় ছিলেন। সাংস্কৃতিক শিল্পিদের অনেক ভাবে সহযোগীতা করতেন। যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রযোজনে গেলে ওনি দ্রুত কাজ করে দিতেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বন্দবেড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেকোনো সমস্যায় তিনি আন্তরিক ছিলেন। তিনি একজন সৃজনশীল ও মানবিক ইউএনও। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু বলেন, মানবিক, সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন। তিনি সততা ও দক্ষতার সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করেছেন বলে আমি জানি। উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার স্মৃতি বলেন, তিনি খুবই ভালো মানুষ। পরিশ্রমী, দক্ষ ও সৎ ব্যক্তি ছিলেন।
উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন বলেন, উনার সততা ও ন্যায়পরায়নতায় আমরা মুগ্ধ হয়েছি। তিনি অত্যন্ত উদার মনের মানুষ। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্ল্যাহ্ধসঢ়; বলেন, টাকার জন্য নয়, তিনি মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য দৌড়াতেন। তার কর্মের কথা রৌমারীবাসী আজীবন মনে রাখবে। প্রত্যেকটি মানুষের কথা তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনতেন ও সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতেন এবং উদ্যামী ও কর্মঠ ছিলেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, জনগুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলির উপর ছিল তার সজাগ দৃষ্টি। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যে মূল ধর্ম কাজের মধ্যদিয়ে জনগনের আস্থা অর্জন করা আমার ধারণা তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রশাসনিক ক্যাডারের সদস্য হিসেবে আমি আল ইমরানের জন্য গর্ব অনুভব করি। তার প্রশাসনিক এলাকায় জনস্বার্থ বিরোধী কোন ঘটনা তার নজরে আসলে তাৎক্ষণিক সরেজমিনে গিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে তা দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেছে বলে আমি জানি। আমি তার সার্বিক সাফল্য কামনা করি।