বিদেশ যাওয়া হলো না আফজালের!

ফারহান সিদ্দিক, সীতাকুণ্ড : সীতাকুণ্ড পৌরসভার মধ্যম মহাদেবপুরের মৃত সোলেমানের ছোট ছেলে আফজাল (২২)। গত বছরের আগষ্ট মাসে মারা যায় তার পিতা মো: সোলেমান। পরিবারে চার ভাইয়ের মধ্যে আফজাল সবার ছোট, বেশ আদরের সন্তান তার মায়ের। পারিবারিক কারনে করা হয়নি তেমন পড়াশোনা। জুনিয়রের গন্ডি পেরোনোর আগেই যেতে হয় ওয়ার্কসপে। ইচ্ছে ছিলো অটোমোবাইলের কাজ শিখে বিদেশ পাড়ি দিবে, ফিরে আসবে পরিবারের সচ্ছলতা। বেশকিছুদিন ধরে বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট, ভিসার আবেদন ও মেডিকেল টেষ্ট দিয়ে এসেছে , এজেন্সিকে প্রদান করে ৬০,০০০ টাকা। ভিসা জটিলতার কারনে আজ কাল করে যাওয়া হয়নি বিদেশ । অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন কখন ভিসা আসবে, পাড়ি দিবে দূর ওমান প্রবাসে কিন্তু কে যানতো জীবনের ভিসা চলে আসবে দুইমাস পর । এসব কথা বলতে বলতে কাঁদছিলেন আফজালের মা সামছুর নাহার ।

ভিসা জটিলতার করনে বিদেশে যেতে বিলস্ব হলে, বসে না থেকে গত ৩রা মার্চ ২০২০ সালে ছোট-কুমিরা জেমসন ডিপো নামের একটি কন্টেইনার ডিপো তে কাজ পেয়েছিলো বন্ধু আকাশের মাধ্যমে। পরিবারের সদস্যরা জেমসন ডিপোর কাজের কথা জানলে ও তার আইডি কার্ডে লিখা ছিলো ফাহিমা রেফিজারেটর এন্ড ইন্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস ড্রাই কন্টেইনার রিপেয়ারিং কোম্পানির নাম। ঐ কোম্পানি থেকে তাকে গত মাসে ট্রান্সফার করা হয় বিএম কন্টেইনার ডিপোতে। যোগদানের দুই মাস না পার হতেই চট্রগ্রামে সীতাকুণ্ড বিএম ডিপোতে ভয়াবহ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড বিস্ফোরণে প্রায় ৪৫ জন মারা গেলেও এখনে নিখোজ রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ৩ সদস্য সহ অনেকে। হতাহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচশতকেরও।

নিহতদের মধ্যে বাইশ বছরের আফজাল একজন। নিহত আফজালের মা বিলাপ ধরে বিস্ফোরিত সেই রাতের স্মৃতি চারণ করে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন ছেলের মুঠোফোনে শেষ বারের মত মায়ের সাথে বলা কথা ” ওমা তোয়ারা কিরর,বেগ্গুনে ভাত খাঁইওনা ” বেগ্গুন কেইল্লে আছে, আঁর ভাইজি ভাত খাঁইয়ে না! এসব কথা সৃতিচারণ করতে করতে অঝরে কেঁধে উঠলেন আফজালের মা।

কবুতর পোষতে পছন্দ করতেন আমার ছোট ভাই আফজাল, পরিবারের নম্র-ভদ্র, সহজ সরল, খুবি শান্ত স্বভাবের ছিলো, এই ভাবে মর্মান্তিক ভাবে অল্পবয়সের আমার ভাইয়ের চলে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারছিনা। এক বছরের মধ্যে বাবা ও ছোট-ভাইকে কে হারালাম।বাবার কবরের পাশে ছোট ভাইয়ের কবর দেখিয়ে কাঁধতে কাঁতে এসব কথা বলেন বড় ভাই আমজাদ।

এই ভাবে যেন আর কারো মায়ের বুক খালি না হয়,এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান আমজাদ। স্বরণকালের ভয়াবহ ট্র্যাজেডি সীতাকুণ্ডের এই বিস্ফোরণ যা চট্রগ্রামবাসী আগে কখনো দেখেনি। আফজাল সহ আরো অসংখ্য মায়ের বুক খালি করে ইতিহাস হয়ে থাকবে সীতাকুণ্ডে এই মর্মান্তিক ঘটনা।