পানির গতি বাড়াতে গিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছি ভয়াবহ বিস্ফোরণ থেকে প্রাণে বাঁচা রায়হান শুনালেন সেই রাতের গল্প

ডেস্ক রিপোর্টঃ সেদিন আমি যদি পানির প্রেশার বাড়াতে না যেতাম তাহলে আজ হয়তো আপনাদের সাথে কথা বলা হতো না। দেখতাম না এ পৃথিবীর মুখ। আমার দেহটিও পুড়ে ছাই হয়ে যেতো। আমার স্বজনরা আমাকে চিনতে পারতো না। সহকর্মীদের যে অবস্থা হয়েছে আমারও সেই পরিণতি হতো। এখনো ঘটনার কথা মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে। ভয়ে কেঁপে ওঠে বুক। রাতের খাবার খেয়ে যাদের সঙ্গে খেয়েছি (সহকর্মী) তাদের নিয়ে সেখানে গিয়েছি তারা মুহুর্তেই জ্বলে পুড়ে গেছে। সুস্থ সবল সহকর্মীরা কিছু সময়ের ব্যবধানে নাই হয়ে গেছে। চোখের সামনে সে দৃশ্য ভাসে। আর চোখ দিয়ে পানি ঝরে। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে সহকর্মী নিপন চাকমা, রবিন, নজরুল এরা আর বেঁচে নেই। জীবনে এতো বড় ভয়াবহ ঘটনার মুখোমুখি হইনি কোনদিন। এভাবেই ৪ জুন শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড থেকে প্রাণে বেঁচে আসার কথা জানাচ্ছিলেন সীতাকুণ্ড সদর ফায়ার স্টেশনের গাড়ি চালক রায়হান পাট্টাদার (৩০)।

ভয়াবহ সেই গল্প বলতে গিয়ে গুমরে কেঁদে ফেলেন সহকর্মী হারানো এ ফায়ার কর্মী। রায়হান পাট্টাদার বলেন, আগুনের মাত্রা এতো বেশি ছিলো যে তাপ সহ্য করা যাচ্ছিল না। সমস্ত দপহ গরম হয়ে ওঠেছিল। স্বাভাবিকভাবে আগুনের সামনে দাঁড়িয়েই আমরা আগুন নেভানোর কাজ করি। কিন্তুু বিএম কন্টেইনার ডিপো’র আগুনের তাপের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মুশকিল ছিল। রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে সেদিন রাতে। তবুও আমরা দুটি স্টেশনের কর্মীরা সেদিন প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছিলাম আগুন নেভাতে। দুটি গাড়ি ও বিএম কন্টেইনার ডিপো’র রিজার্ভ ট্যাংক থেকে পানি ঢাললেও কিছুতেই আগুন যেন নেভার নয়। বরং দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ছিল চারদিকে। আগুনের ফোয়ারা উপরের দিকে ওঠছিল বরাবর। আগুনের উর্ধ্বমুখী ভাব আর ছড়িয়ে পড়া দেখে আমরা ভয় পেয়েই গেছিলাম সবাই। কোন পানিতেই কাজ হচ্ছে না। সিদ্ধান্ত হলো মেশিনের পানির প্রেশার আরও বাড়ানোর। আর সেই কাজটি আমিই করে থাকি। যখনি আমি ১’শ মিটার দূরে মেশিনের পানির প্রেশার বাড়াতে যায় তখনি ঘটে যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ।

সাথে সাথে পুরো বিএম ডিপো ঘন অন্ধকার আর কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কেউ কাউকে দেখতে পায়না। চারিদিকে শুধু মানুষের কান্নার আওয়াজ, চিৎকার-চেঁচামেচি। সবাই হাঁওমাঁও করে কাঁদছিল। বাঁচার সে কি আকুতি। জীবনেও দেখিনি এমন মর্মান্তিক ঘটনা। ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণে কারো হাত, কারো পা উড়ে গেছে। আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উড়ে গেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম আমি। দিশেহারা হয়ে পরে কোনমতে ডিপো থেকে বের হয়ে প্রাণে বাঁচি।

রায়হান পাট্টাদার আরও বলেন, সহকর্মীদের অনেক খুঁজেও পায়নি। সেদিন রাতে এক প্রকার পাগল হয়ে পড়েছিলাম। একবার ডিপোতে আরেকবার মহাসড়কের মুখে দৌড়েছিলাম। এতো ভয়াবহ ছিলো বিস্ফোরণ বলে বোঝানো যাবেনা। সেদিনের মতো ভয়াবহ ঘটনা চাকরী নয় জীবনে প্রথম দেখেছি। আগুন কিভাবে বন্ধু-সহকর্মীদের পুড়ে দিলো ভাবতেই পারছি না। তিনি বলেন, বিএম কন্টেইনার ডিপো কর্মকর্তারা আমাদের বলেনি যে কন্টেইনারের ভিতরে ক্যামিকেল রয়েছে। যদি বলতো তাহলে আমরা সাদামাটাভাবে আগুন নেভাতে যেতাম না। ক্যামিকেলের কথা বললে আমরা আগুন নেভাতেও একটু সিদ্ধান্ত নিতাম। এ ধরণের আগুনে ফোম ব্যবহার করতে হয়। আমাদের নিরাপত্তার কথা আমরাই ভাবতাম।