”হালদা নদীর নীরব কান্না” -৩টি ডলফিনের মৃত্যুর পর এবার পরপর ২টি কাতলা মাছের মৃত্যু

হাটহাজারী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ  বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ নামে পরিচিত  হালদা নদী বাংলাদেশের স্বাদুপানির মেজরকার্প জাতীয় মাছের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। হালদা  জলজ বাস্তুতন্ত্রে রয়েছে ৮৩ প্রজাতির মাছ (ফিনফিশ) ও ১০ প্রজাতির চিংড়ি (শেলফিশ), গাঙ্গেয় ডলফিন ও অন্যান্য জলজ প্রাণি। হালদা বাস্তুতন্ত্র মাছ, গাঙ্গেয় ডলফিন ও অন্যান্য জলজ প্রাণি নিরাপদ আশ্রয়স্হল ছিল। কিন্তু বর্তমানে হালদা বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ক্রমশ জলজ প্রাণির জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। অতিসম্প্রতি চলতি মাসে হালদা নদী থেকে ৩টি মৃত ডলফিন সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রথমটি ১৪ জুলাই – দক্ষিণ গহিরার বুড়ি সর্তা খাল, দ্বিতীয়টি ২০ জুলাই- আজিমারঘাট ও তৃতীয়টি ২১ জুলাই- আজিমারঘাট থেকে। ডলফিন একটি জলজ বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশের নির্দেশক ও প্রতিবেশের প্রহরী ও বলা হয়। ডলফিনের অবস্থা ও সংখ্যা থেকে খুব সহজে জলজ বাস্তুতন্ত্রের দূষণ পরিমাপ করা যায়। আবার একটি বাস্তুতন্ত্রে ডলফিনের সংখ্যার বেশি হলে ঐ বাস্তুতন্ত্রের মাছের পরিমাণ ও বেশি হবে।
অতি-দুঃখের বিষয়, গতকাল ২৫ জুলাই (সোমবার) হালদা নদীর রাউজানের কাগতিয়া স্লইজ গেইট এলাকা থেকে প্রায় ৯ কেজি ওজনের একটি মৃত কাতলা মাছ এবং আজ ২৬ জুলাই (মঙ্গলবার) হাটহাজারীর গড়দুয়ারার নয়াহাট এলাকা থেকে সাড়ে ১২ কেজি ওজনের আরেকটি মৃত কাতলা মাছ পাওয়া যায়। হালদায় এক সপ্তাহে ৩টি ডলফিনের মৃত্যু এবং সপ্তাহ না পেরোতে ২ টি কাতলা মাছের মৃত্যু হালদা বাস্তুতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। যা হালদা নদীর বাস্তুতন্ত্রের দূষণকে নির্দেশ করে। এছাড়াও হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ও শাখাখালে অবৈধভাবে বিভিন্ন ধরনের জাল, বড়শি ও রাসায়নিক বিষ ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত মাছ ধরা হচ্ছে যা হালদা জলজ বাস্তুতন্ত্রের জন্য হুমকি। এমতাবস্হায় আমাদের জাতীয় সম্পদ হালদা নদীর বাস্তুতন্ত্রকে স্বাভাবিক অর্থাৎ মাছ, ডলফিন ও অন্যান্য জলজ প্রাণির নিরাপদ বাসস্হান গড়ার লক্ষ্যে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড প্রতিরোধে প্রশাসনের পাশাপাশি হালদা সম্পর্কিত সবাইকে আরো বেশি তৎপর হতে হবে। হালদা নদীর বাস্তুতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা অর্থাৎ দূষণের মাত্রা জানতে হালদার পানি গুণাবলি পরীক্ষা করে দূষণের উৎস/স্হান নির্ণয় করা অতীব জরূরী। হালদা বাস্তুতন্ত্রকে তার চিরচেনা স্বাভাবিকরূপে এবং হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হালদা নদী উপর একাডেমিক অভিজ্ঞ গবেষকদের সম্বনয়ে বিশেষজ্ঞ দল গঠন ও নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।