
তেতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ তেতুলিয়ায় থেকে এই বছর বেশ পরিষ্কারভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃংঘ দেখা যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার জন্য অনেকেই এসব জেলায় ভিড় করছেন। ফেসবুকেও অনেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার ছবি পোস্ট করছেন।
পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ার বাসিন্দা কাজী মোকছেত, ডাকবাংলায় পর্যটক কেন্দ্রের ক্ষুদ্র ব্যবসাহী হাফিজুর রহমান হাবিব ও তার স্ত্রী মোছা: ফেরদৌসী বেগম জানান ”প্রতি বছরই এই সময়ে তেতুলিয়া থেকে কম বেশি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। কিন্তু এই বছরের মতো এতো পরিষ্কারভাবে অনেক বছর থেকে দেখা যায়নি।
তারা জানান, উপজেলার সব প্রায় সব জায়গা থেকেই শুভ্র সাদা বরফে আচ্ছাদিত পর্বতমালাটি দেখা যাচ্ছে। এমনকি কোন কোন স্থান থেকে পর্বতমালার নীচের কয়েকটি শহরের ঘরবাড়ি, আলো, গাড়ি চলাচলও দেখা যাচ্ছে।
পঞ্চগড় জেলা তেতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়ে মুগ্ধ ঢাকা জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সজল এবং কমল কুমার রায় তাদের বাড়ি বরিশাল ও নীল ফামারী জেলায় বলে জানান।
পঞ্চগড় প্রেস ক্লাবের সভাপতি এনটিভি সাজ্জাদ হোসেন, বিটিভি আমির খুসরু লাভলুর মতো অনেক পর্যটক জানান অপরুপ দৃশ্য পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়ে মুগ্ধ জয়পুর হাট সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোছা: তাজরিন তামান্না এশার মতো অনেক পর্যটক কাঞ্চনজঙ্ঘা ভারতের সিকিম ও নেপাল জুড়ে অবস্থিত।
এটি পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার বা ২৪, ১৬৯ ফুট। কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্যটকদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় একটি আকর্ষণ। ভারতের অন্যতম শৈল শহর দার্জিলিং, ঘুম বা কালিম্পংয়ের প্রধান আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা। তেতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, ”বছরের এই সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় আর বাতাসে ধুলা, মেঘ-কুয়াশামুক্ত থাকায় অনেক দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘা পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে। অন্য বছরেও এই সময়ে এখান থেকে এই পর্বত দেখা যায়। তবে এই বছরে আবহাওয়া বেশি পরিষ্কার থাকার কারণে অনেক ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে।”
পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া বাসিন্দা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিক জানান বলছিলেন, ”প্রতি বছরই এই সময়ে আমাদের জেলা থেকে কম বেশি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। কিন্তু এই বছরের মতো এতো পরিষ্কারভাবে অনেক বছর দেখা যায়নি।”
ছবির উৎস,ন্যাশনাল ইনর্ভাসিটি টেকনিক্যাল অফিসার শ্রী কাজল কুমার রায় জানান, সুন্দর ও নয়নাভিরাম দেখ পেয়ে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ার বাসিন্দা মাসুদ করিম সিদ্দিক বলছিলেন ”প্রতি বছরই এই সময়ে নয়নাভিরাম পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে ছবির মতো ভেসে উঠা শেত শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য অনেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘার রুপ দেখার জন্য রাত থেকে অপেক্ষা করে বসে থাকে৷ পর্যটকদের থাকার জন্য জন্য রয়েছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ও উপজেলা পরিষদের বেরং কমপ্লেক্সে এবং বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল। দেশের সব বিনোদন কেন্দ্র টাকা বা টিকেট কাটতে হলেও তেঁতুলিয়ায় বিনা পয়সায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যায়।
এদিকে শীত পড়ার আগেই পরিষ্কারভাবে হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দেয়ায় অনেকেই সেই সৌন্দর্য ও দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছেন। মূলত মেঘমুক্ত আকাশ থাকায় পর্বতটি দেখা দিয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। তেঁতুলিয়ার জেলা পরিষদের ডাকবাংলো থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, মহানন্দা নদীতে পাথর উত্তোলনের দৃশ্য আরও বেশী নজর কাড়ে পর্যটকদের। এছাড়া তেঁতুলিয়া পিকনিক কর্ণারে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা যা ছোট বড় সব বয়সী মানুষের নজর কারে।
লালমনিরহাট থেকে আসা পর্যটক মেহেদী ও আরিফুল তারা বলেন, গত কয়েকদিন ফেসবুকে দেখতে পাই ছবি পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে এমন খবর পাওয়ার পর বন্ধুদের নিয়ে পঞ্চগড়ে সকালে এসে দেখতে পাই কাঞ্চনজঙ্ঘা।
একই কথা বলেন ঢাকা থেকে আগত পর্যটক শ্রেষ্ঠা জানান, আগে শুধু শুনেছি তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড় দেখা যায়। কিন্তু এবার বাস্তবে দেখলাম। অসাধারণ এক দৃশ্য। যা না দেখলে কেউ অনুধাবণ করতে পারবে না। এত কাছে, এত স্পষ্ট আমি কল্পনাই করতে পারিনি।
পঞ্চগড় তেতুলিয়ায় টুরিস্ট পুলিশ জোনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গা, দূরদূরান্ত থেকে যেসকল পর্যটক কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসেন। আমরা আগত পর্যটকরা যাতে করে কোনো পর্যটক তেঁতুলিয়ায় এসে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে সর্বদায় আইনি সেবা দিতে সর্বদা টুরিস্ট পুলিশ।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, বর্ষা পরবর্তী শরতের শেষ ভাগে তেতুলিয়া ডাকবাংলো থেকে মনোমুগ্ধকর কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলছে। কাঞ্চনজঙ্ঘার এই মনোমুগ্ধকর রুপ অবলোকনসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও দেখতে দিন দিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যটকদের আবাসিক সমস্যা দূরীকরণে সরকার বিভিন্ন উদ্যাগে গ্রহণ করছে। আমরা ইতোমধ্যে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোকে নতুন করে সাজিয়েছি।