
মাসুদ পারভেজ, রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ গত কয়েক দিন থেকে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে শীতের তীব্র ঠান্ডায় জনসাধারনের স্বাভাবিক কাজকর্ম থমকে দাঁড়িয়েছে। অপর দিকে চরম হতাশায় দিন কাটছে মৌচাষিদের। হিমালয় ছুঁয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে উত্তরবঙ্গের রৌমারী উপজেলা। শীতের তীব্র ঠান্ডা ও মাঝে মধ্যে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির ফলে বিপাকে মৌচাষিরা। শনিবার ৩১ ডিসেম্বর সকালের দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়ন কাঠাল বাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন খামারি জীবন ও জীবিকার তাগিদে এ অঞ্চলে আসেন।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা আবাদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মৌসুমি মৌচাষিদের তৎপরতা। সরিষা যেমন দিচ্ছে তৈল, সঙ্গে দিচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এছাড়া সরিষা চাষে রয়েছে দ্বিগুণ লাভ। তবে গত মৌসুমের তুলনায় এবার শীতের তীব্র ঠান্ডায় মৌমাছি ঠিক মতো মধু আহরন করতে পারছে না। অপর দিকে মধু ব্যবসায় সিন্ডিকেট এর কারনে খামারিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন অনেকে। কোম্পানী ন্যায দাম দিলেও সিন্ডিকেট এর কারনে উপায় না পেয়ে কম দামে দিতে হয় মধু। দিনের পর দিন মাসের পার মাস কষ্ট করে কাংক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে পারেন না খামারিরা। মরার উপর খরা আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় বিপাকে এই মৌচাষিরা। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে একশত পঞ্চাশ মৌমাছির বক্স থেকে ১০ থেকে ১১ মন করে মধু সংগ্রহ করা যায়। একই বক্সে গত মৌসুমে ১৩ থেকে ১৫ মন করে মধু পাওয়া যেত। ইতি পূর্বে প্রতি মনে মধুর দাম ছিলো প্রায় ৬ হাজার টাকা। বর্তমানে সিন্ডিকেট এর কারনে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় দিতে হচ্ছে মধু। মধু খামারিদের দাবি পূর্বের দামে মধু বিক্রি করতে চান তারা।
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার টেংরাখালী গ্রাম থেকে আসা তালহার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গত মৌসুমের চেয়ে এই মৌসুমে প্রাকৃতিক অবস্থা খুব ভালো না। রৌমারীতে শীতের তীব্রতা বাড়ায় মৌমাছিরা ভালো ভাবে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারছেনা। আমরা সঠিক দাম পাওয়া নিয়ে বিপাকে আছি। এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা থেকে আসা মোকাররম হোসেন মধু মিলন মৌচাষি সমবায় সমিতির জেলা সাধারন সম্পাদক বলেন, আমরা অনেক পরিশ্রম করে মধু সংগ্রহ করে থাকি কিন্তুু ন্যায দাম পাইনা। এদিকে আবহাওয়া খুব ভালো না থাকার কারনে বিপাকে আছি। মধু খামারিরা কিছু সিন্ডিকেট এর কাছে অসহায়। আমাদের দাবি ন্যায দামে মধু কেনা হোক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম চৌধরী বলেন, এবার উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে মোট ৫ হাজার ১ শত ৫০ হেক্টও জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এবার সরিষার গুনগত মান অনেক ভালো। তিনি আরও বলেন, রৌমারীতে অনেক মৌচাষি আসায় সেখানকার ফলন প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি হবে ওই স্থানে। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের সহয়তা করে থাকে। তবে আশা করছি পরিবেশ অনূকুলে থাকলে সরিষার ফলন বাম্পার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।