অটো টেম্পো চালক কর্তৃক আলী ইমাম ও জাহিদ’র বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

চট্টগ্রাম নগরীর শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রীজ) এলাকার বশিরুজ্জামান চত্বর থেকে টাইগার পার্স পর্যন্ত ১৭ নম্বর সড়কে চলাচলরত অটোটেম্পু থেকে ছাত্র, বিএনপি, পুলিশের নামে নতুন করে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কথিত শ্রমিক লীগ নেতা জাহিদ প্রকাশ টেম্পো জাহিদ ও কথিত শ্রমিক লীগ নেতা আলী ইমাম বর্তমানে বিএনপির নেতা পরিচয়ে অটোটেম্পু স্টেশন দখল করে বসে আছে। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর পূর্বের ন্যায় ফের চাঁদাবাজি করছেন পরিবহন জগতে।

এদিকে ইউনিয়নের নেতৃত্বে আংশিক বদল হলেও চাঁদাবাজির জিম্মিদশা থেকে টেম্পোচালক ও শ্রমিকেরা এখনো মুক্ত হননি। দক্ষিণ চট্টগ্রামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে প্রশাসন, পুলিশসহ ব্যক্তি ও সংগঠনের নামে এখনো মাসে অন্তত ২০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

টেম্পোচালক ও মালিক সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর এই রুটের টেম্পোসহ শ্রমিক ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ নিতে একটি পক্ষ বিক্ষোভ শুরু করে। সেপ্টেম্বর নাগাদ ওই পক্ষ ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণে নেয়। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদককে বিতাড়িত করে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দাবি করেন আলী ইমাম নামের এক শ্রমিকনেতা। তবে বহাল তবিয়তে থাকেন সভাপতি মো. জাহেদ।

গত স্বৈরাচার সরকারের আমলে একই লাইনের একটা গ্রুপের কাছে পরিবহন শ্রমিকরা জিম্মি ছিলো। এখনও নতুন করে জিম্মি করে রাখছে সংগঠনের নামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।তাদেরকে শেল্টার দিচ্ছে বিএনপি’র একাধিক নেতা। মূলত আলী ইমাম ও জাহিদ গ্রুপটি কিশোর গ্যাং লিডারে সক্রিয় বলে জানা গেছে। তারা সবাই ছিলেন সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী নওফেল এর কর্মী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের নামে বাকলিয়া থেকে নতুন ব্রিজ, নতুন ব্রিজ থেকে নিউ মার্কেট ও টাইগারপাস এলাকায় রুট পারমিটবিহীন প্রায় ৪ শত মাহিন্দ্রা, ম্যাক্সিমা গাড়ি চলাচল করছে। এসব গাড়ি থেকে দৈনিক ১২০ টাকা হারে চাঁদা নেন টেম্পো জাহিদ ও আলী ইমামের লোকজন। কয়েকজন নির্দিষ্ট মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকে গাড়িগুলোর কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করেন।

এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্তির বলয়ে নির্বাচন বিহীন নেতৃত্ব দখল করে দীর্ঘকাল যাবত মেট্রো বিআরটিসি অনুমোদিত ১৭ নং অটোটেম্পো রুটে চালকদের  রুটে চালকদের ভর্তি ফি ২৫/৩০ হাজার টাকা। কর্মকালীন সময়ে নতুন ব্রীজ, কোতোয়ালী মোড় , জিপিও এলাকায় বিভিন্ন স্তরে দৈনিক ১২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে আসছে।

এছাড়া এই রুটে সিলিং সংখ্যা ১৪৫ টি হলেও পারমিটবিহীন বহিরাগত অটোটেম্পো ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সংগঠনের নামে চলার সুযোগ করে দিয়ে থাকে এবং পারমিট অনুমোদিত অটোটেম্পোও এককালীন ৩০ হাজার টাকা নিয়ে মাসিক ১ হাজার টাকা করে প্রায় ৪০০/৪৫০ টি গাড়ি থেকে নিয়মিত মোটা অংকের চাঁদা আদায় করছে বলে জানা যায়। মেট্রো বিআরটিসি অনুমোদিত ১৭ নং অটোটেম্পো রুটটি নতুন ব্রীজ থেকে মেরিনার্স রোড হয়ে ফিরিঙ্গীবাজার, কোতোয়ালী, নিউমার্কেট হয়ে টাইগার পার্স পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বরত কর্তাদের অনৈতিক ফায়দার বিনিময়ে পরিপূর্ণ রুটে গাড়ি না নিয়ে জিপিও নিউ মার্কেটে অবৈধভাবে স্টেশন স্থাপন করায় একদিকে যাত্রীদের হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্যসহ অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি করে আসছে। এ বিষয়ে কোন শ্রমিক-মালিক বা প্রতিবাদ করলে উল্লেখিত ব্যক্তিদের বাহিনী দ্বারা নির্যাতন করে বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।

চট্টগ্রাম নগরের নতুন ব্রিজ মোড় থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত ১৭ নম্বর রুটে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে সাড়ে ৩ শত অটোটেম্পো চলাচল করে। দীর্ঘ সময় ধরে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে চট্টগ্রাম অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন। বিভিন্ন সময় সংগঠনটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলেও ৫ আগস্ট পর্যন্ত তাঁদের কিছুই হয়নি। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিক্ষোভের মুখে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বিতাড়িত হন। তবে এখনো বহাল-তবিয়তে রয়েছেন সভাপতি। আর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দাবি করছেন আওয়ামী পন্থী আরেক শ্রমিকনেতা।

এদিকে ইউনিয়নের নেতৃত্বে আংশিক বদল হলেও চাঁদাবাজির জিম্মিদশা থেকে টেম্পোচালক ও শ্রমিকেরা এখনো মুক্ত হননি। দক্ষিণ চট্টগ্রামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই রুটে প্রশাসন, পুলিশসহ ব্যক্তি ও সংগঠনের নামে এখনো মাসে অন্তত ২০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

টেম্পোচালক-মালিক সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর এই রুটের টেম্পোসহ শ্রমিক ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণ নিতে একটি পক্ষ বিক্ষোভ শুরু করে। সেপ্টেম্বর নাগাদ ওই পক্ষ ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণে নেয়। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জানে আলমকে বিতাড়িত করে নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দাবি করেন আলী ইমাম নামের এক শ্রমিকনেতা। তবে বহাল তবিয়তে থাকেন সভাপতি মো. জাহেদ।

টেম্পোমালিকদের অভিযোগ, সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বর্তমানে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের নেতৃত্বে ইউনিয়নের পক্ষে চালকদের পরিচয়পত্র, লাইনে গাড়ি চালানোসহ নানা অজুহাতে মালিকপ্রতি ৩০-৫০ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।

চালক-মালিকদের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিচয়পত্র বাবদ ১০ হাজার, দৈনিক ২০০ ও মাসে ২ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে এই লাইনে গাড়ি চালাতে হচ্ছে প্রত্যেককে।

ভুক্তভোগী চালকদের একজন বলেন, লাইন খরচের নামে দৈনিক যে ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে, সেটা দিতে দেরি হলে শারীরিকভাবে হেনস্তারও শিকার হতে হয়। অনেক সময় গাড়িভাড়া না মারার আগেই তাঁদের লোকজন টাকা দাবি করে থাকেন, চালকেরা ভাড়া মেরে টাকা দেবেন বললে তাঁরা চালকের পকেট চেক করাসহ গাড়ির চলাচল বন্ধ রাখেন। এভাবে প্রতিনিয়ত আমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছি।

চালক-মালিকদের ভাষ্য, এই রুটে গাড়ি নামানোর জন্য পারমিটবিহীন অটোটেম্পোর ক্ষেত্রে এন্ট্রি ফি বাবদ মালিকদের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর পারমিট থাকা টেম্পোর জন্য দিতে হয় ১০-১৫ হাজার টাকা।

ওই রুটের চালকদের একটি অংশ চাঁদাবাজির প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিএমপি কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দিয়েছেন। তবে চট্টগ্রাম অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. জাহিদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এভাবে কেউ চাঁদা আদায় করে থাকলে তাঁকে ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হোক।

এদিকে সাধারণ সম্পাদক আলী ইমামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, পূর্বে যারা কমিটিতে ছিল, তারাই চাঁদাবাজি করেছিল এবং তারাই এখন এসব মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে, আমরা কোন রকম চাঁদাবাজি করি না।