মধ্যনগরে অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলো সেই আতিক ও অজয়

মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃসুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর বাজারে বই মেলার নামে চাঁদাবাজি সহ  স্থানীয়  মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অপমান করার ঘটনায় অবশেষে স্হানীয় বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলো সেই অজয় রায় ও আতিকুর রহমান ফারুকী। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে মধ্যনগর বাজারে উপজেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে এলাকার নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এ বিষয়টি মীমাংসার লক্ষে আয়োজিত এক সভায় উপস্থিত স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলো মধ্যনগর সাহিত্য সংসদের সভাপতি অজয় রায় ও সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক আতিকুর রহমান  ফারুকী।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি মধ্যনগর সাহিত্য সংসদ নামে একটি সংগঠন মধ্যনগর বাজারের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সপ্তাহব্যাপী এক বই মেলার আয়োজন করে। আর ওই বই মেলার নাম করে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক মিলে  গত প্রায় এক মাস আগে থেকেই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের কাছ থেকে লাখ- লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে। পরে বই মেলার উদ্ধোধনের দিন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্টানে তাঁদেরকে অপমান করা হয় বলে অভিযোগ উঠে সংগঠনের সভাপতি অজয় রায় ও সম্পাদক সাংবাদিক আতিক ফারুকীর বিরুদ্ধে ।

এ বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি  একাধিক জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের টনক নড়ে। পরে এব্যাপারে মধ্যনগর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি  অজয় রায় ও সাধারন সম্পাদক  সাংবাদিক আতিকুর রহমান ফারুকীকে অভিযুক্ত করে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম বাদি হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন ওই অভিযোগটি তদন্ত করে আগামি ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন তাঁর কাছে জমা দেওয়ার জন্য উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিনকে নির্দেশ দেন।
এর পর থেকেই এ বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য অভিযুক্ত সংগঠনের  সভাপতি অজয় রায় ও সাধারন সম্পাদক আতিকুর রহমান ফারুকী উপজেলা প্রশাসন সহ এলাকার স্থানীয় গন্যমাণ্য ব্যক্তিদের কাছে দৌড় ঝাঁপ শুরু করেন।  এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক মীমাংসা বৈঠকে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসা করা হয়।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নূরুল ইসলাম বলেন, বই মেলার উদ্ধোধনী অনুষ্টানে আমাদেরকে অপমান করার বিষয়টি এলাকার গন্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গসহ উপস্থিত শত শত লোকজনের সামনে অজয় রায় ও আতিক ফারুকী তারা দুইজনই প্রকাশ্যে আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। তাই আমরা তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তবে ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে বই মেলার নামে যে চাঁদাবাজীর অভিযোগটি রয়েছে,  সেটি আইনী প্রক্রিয়াতেই শেষ হবে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়নের ফারুক নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক অজয় রায়কে সভাপতি ও ফারুক নগর গ্রামের বাসিন্দা নব্য সাংবাদিক আতিক ফারুকীকে সাধারণ সম্পাদক করে “মধ্যনগর সাহিত্য পরিষদ” নামে একটি নাম সর্বস্ব  সংগঠন গড়ে তোলা হয়। যার কোথাও কোনো ঘর বা সাইনবোর্ড নেই। তারা দুইজন ওই সংগঠনের নামে ২১শে বই মেলা উদযাপন করার কথা বলে গত প্রায় এক মাস আগে থেকেই বাজারের ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ প্রবাসীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে আসছিলেন। এমনকি অনুষ্টানের ব্যানারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করা হবে বলে তারা স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকেও ৮০০০ টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের ওই অনুষ্টানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণও জানানো হয়। কিন্তু ২২শে ফেব্রুয়ারির দিন মধ্যনগর বাজার শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ক্ষুদ্র পরিষরে বই মেলা উদযাপন করা হলেও অনুষ্টানের ব্যানারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উল্লেখ না করায় এবং অনুষ্টানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে  কোনো ধরনের সম্মান না করায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এ অনুষ্টান বর্জন

করেন। পরে রবিবার সকালে এ বিষয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আলহাজ্ব  বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুল ইসলাম বাদি হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে এ লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে এ এবিষয়ে দৈনিক  বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়