ঈদ উৎসব হোক সর্বজনীন ও কল্যাণময় 

রমজানের প্রাণবন্ত সময়গুলো শেষ প্রান্তে। অবারিত   রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত রমজান মাসের সিয়াম সাধনার শেষে শাওয়ালের  চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদ আগমনী বার্তা। বিশ্বের সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের হৃদয় দুলছে ঈদের খুশিতে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে মুসলমানদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে  বিশেষ উপহার ঈদ উৎসব। প্রচলিত নিয়মে দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে দিনটিকে স্মরণীয় করার নাম ঈদুল ফিতর।
বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর অনাবিল আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। ‘ঈদ’ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব। ঈদুল ফিতরের দিন প্রতিটি মুসলমান নারী-পুরুষের জীবনে অশেষ তাৎপর্য ও মহিমায় অনন্য। ঈদ মানে ইবাদত ও আনন্দ। রমজানের সিয়াম পালনের ইবাদতের মাধ্যমে আমরা পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হয়ে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, দানশীলতা, উদারতা, ক্ষমা, মহানুভবতা, সাম্যবাদিতা ও মনুষ্যত্বের গুণাবলি দ্বারা বিকশিত করার নামই ঈদুল ফিতর।
শাওয়ালের চাঁদ দেখামাত্র বেতার-টেলিভিশন ও পাড়া-মহল্লার মসজিদের মাইকে ঘোষিত হয় ঈদের আগমনী বার্তা।শুরু হয়ে যায় ঈদ উৎসব,মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে নিয়ে আসে আনন্দের সওগাত। ঈদগাহে কোলাকুলি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করে। ঈদ এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করে। মাহে রমজানের রোজার মাধ্যমে নিজেদের অতীত জীবনের সব পাপ মুক্ত হওয়ার অনুভূতি ধারণ করেই পরিপূর্ণতা লাভ করে ঈদের খুশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) সানন্দে ঘোষণা করেন, ‘প্রতিটি জাতিরই আনন্দ-উৎসব রয়েছে, আমাদের আনন্দ-উৎসব হচ্ছে এই ঈদ।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ঈদের নামাজের অশেষ ফজিলত ও সম্মানজনক মর্যাদা সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন ফেরেশতারা রাস্তার মুখে মুখে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন: হে মুসলিম! নেককাজের ক্ষমতাদাতা ও সওয়াবের আধিক্যদাতা আল্লাহর কাছে অতি শিগগির চলো। তোমাদের রাতে ইবাদত করার হুকুম করা হয়েছিল, তোমরা তা করেছ, দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তোমরা তা পালন করেছ। তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তাকে খাইয়েছ (অর্থাৎ গরিব-দুঃখীদের আহার দিয়েছ) আজ তার পুরস্কার গ্রহণ করো। অতঃপর মুসলমানরা যখন ঈদের নামাজ পড়ে তখন একজন ফেরেশতা উচ্চ স্বরে ঘোষণা করেন, তোমাদেরকে তোমাদের সৃষ্টিকর্তা ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তোমাদের পুণ্যময় দেহ-মন নিয়ে নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন কর। এ দিনটি পুরস্কারের দিন, আকাশে এই দিবসের নাম “উপহার দিবস” নামে নামকরণ করা হয়েছে।’ (তাবারানি)
আমার স্মৃতিতে এখনো ভাসে আমার মরহুম শ্রদ্ধেয় বাবা আমাদের টু স্ট্রোক প্রাইভেট বেবি টেক্সী করে চট্টগ্রামে ঈদ জামাত কমিটির আয়োজিত চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে (চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম) পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে ঈদ জামাত আদায় করতে যেতেন। আমার কৈশোরকালে চট্টগ্রামে শিশু পার্ক না দেখলেও ঠিকই  বিশাল ঈদগাহ র ময়দান পেয়েছিলাম।এছাড়াও রেয়াজুদ্দিন বাজার,নিউ মার্কেট (বিপণি বিতান )ঈদ কেনাকাটার জন্য বৃহত্তর শপিং মল হিসাবে পরিচতি ছিল।প্রতি ঈদের আগে গান আর বাংলা সিনেমা রিলিজ হওয়া সেকালের ঈদ উৎসবের মূল আকর্ষন ছিল। এছাড়াও ঈদ সেলামি,পাড়ায় ঘুরাঘুরি সহ আর সেমাই খাওয়ার স্মৃতি গুলো অনেক মধুর ছিল আমাদের সময়কাল ঈদে।
ঈদ উৎসবের মাধ্যমে ধনী-গরিব সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নেয় এবং পরস্পরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়। আমার কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা, জগতের সব মানুষের সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হোক। আগামী দিনগুলো সত্য, সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হোক! হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক! ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক- এটাই হোক ঈদুল ফিতরের ঐকান্তিক কামনা। শিকড়ের টানে ঈদ আনন্দের যাত্রায় সড়ক,রেল,নৌপথ সবখানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা মেনে সুস্থ দেহ নিয়ে ঈদ উৎসব হোক সর্বজনীন ও কল্যাণময়। ঈদের নির্মল আনন্দ ছড়িয়ে দিই সবার মনে-প্রাণে; মাস্কবন্ধী মুখ আর করোনাকালিন করমর্দন করা থেকে বিরত রেখে চলুন সবাই সবার হয়ে বলে যাই, ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ‘ঈদ মোবারক’।
লেখক -মুহাম্মদ সাজিদুল হক