
কামরুল হক চৌধুরী: শনিবার (১অক্টোবর) বীর মুক্তিযোদ্ধা, জীবন্ত কিংবদন্তি বর্ষীয়াণ রাজনীতিক,বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ৭৭তম জন্মদিন। তিনি ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ড.মোশাররফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, গবেষক, প্রথিতযশা ভূ-বিজ্ঞানী, লেখক ও কলামিষ্ট। বর্ণাঢ্য কর্মবহুল জীবনে তাঁর ঝুৃৃঁলিতে অর্জনের ভাণ্ডার বিশাল। এলাকায় হাজার কোটি টাকার যুগান্তকারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নসহ নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য দেশ-বিদেশে স্বর্ণপদক ও অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি হাইস্কুল থেকে ‘৬২ সালে মেট্রিকুলেশন, চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে ‘৬৪ সালে আই.এসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘৬৮ সালে এম.এস.সি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ‘৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব বিভাগে জুনিয়র প্রভাষক পদে যোগ দেন এবং একই বছর কলম্বো-প্লান স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চতর শিক্ষার (Ph.D) জন্য লণ্ডন(বিলেত) গমন করেন। ড.মোশাররফ ‘৭০ সালে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে এম.এসসি, ‘৭৩ সালে ডিআইসি ডিপ্লোমা এবং ‘৭৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। ‘৭৫ সালে বিলেত থেকে দেশে ফিরে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন এবং পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ‘৮৭ থেকে ‘৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূ-তত্ত্ব বিভাগে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ‘৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবার জন্য তিনি ঢাবি’র শিক্ষকতা থেকে পদত্যাগ করেন।
দেশবরেণ্য আলোকিত রাজনীতিক ড.মোশাররফ । ছাত্রজীবনেই তাঁর মেধা, মননশীল চিন্তা, মানবিক গুণাবলী ও নেতৃত্বের যোগ্যতা আলোর দ্যুতির ন্যায় সর্বত্র দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এজিএস এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের ভিপি নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টির জন্য খন্দকার মোশাররফ ‘৭১সালে বিলেত প্রবাসী বাঙালীদের সংগঠিত করেন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হিসাবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। স্বাধীনতার পর প্রকাশিত প্রথম গেজেট থেকেই ড.মোশাররফ বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভূক্ত রয়েছেন। বর্তমান সরকার “প্রবাসে বিশ্বজনমত গঠন” ক্যাটাগরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তাঁর নাম গেজেটভূক্ত করেছেন। তিনি দেশ ও জনগণের স্বার্থরক্ষার আন্দোলনে সর্বদাই নায়কোচিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানেও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বীরোচিত ভূমিকা রাখছেন। ফলে ড.মোশাররফ বিভিন্ন সরকারের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তিনি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক মামলায় ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৭,২০১২ এবং ২০১৪ সালে গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৫ বছর কারাভোগ করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ‘৭৯ সালে ঢাবি’র মেধাবী শিক্ষক ড.মোশাররফ বিএনপি’র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন এবং দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ‘৯৪ সাল থেকে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন।
ড.মোশাররফ কুমিল্লা-২ (দাউদকান্দি ও মেঘনার অংশ) আসন থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ‘৯১-‘৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের বিদ্যুৎ,জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী, ‘৯৬ সালে স্বল্প মেয়াদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০০১-০৬ মেয়াদে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ড.মোশাররফ দাউদকান্দির উত্তরাঞ্চলে ‘তিতাস উপজেলা’ প্রতিষ্ঠা,দাউদকান্দিকে পৌরসভায় উন্নীত ও বিশাল পৌরভবন নির্মাণ, শহীদনগরে ট্রমা সেন্টার,নবগঠিত মেঘনা উপজেলা বাস্তবায়ন, দাউদকান্দি সদরে ২০ শয্যার হাসপাতাল, তিতাস ও মেঘনায় উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন,২ টি ৫০ শয্যার হাসপাতাল ও ২টি থানা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ,ঢাকারগাঁওয়ে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপনসহ সর্বক্ষেত্রে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছেন। এতে এলাকায় অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে।
ড.মোশাররফ এলাকার ৩ সহস্রাধিক শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান করেছেন। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য তিনি ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে গোমতী নদীতে ‘দাউদকান্দি সেতু’ নির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। আলোকিত সমাজ গঠনের মহান ব্রত নিয়ে তিনি নিজ নামে প্রতিষ্ঠা করেন, ড.মোশাররফ ফাউণ্ডেশন। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২টি কলেজ,২টি হাইস্কুল,১টি গার্লস হাইস্কুল,১টি দাখিল মাদরাসা,১টি নূরানী মাদরাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি ও ঈর্ষণীয় ফলাফলের মাধ্যমে এলাকার শিক্ষাব্যবস্থাকে করেছে আলোকিত ও সমৃদ্ধ।
ড.মোশাররফ ‘প্লাবণ ভূমিতে মৎস্য চাষ পদ্ধতি’র উদ্ভাবক। মৎস্য ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার স্বর্ণপদক লাভ করেন। ২০০৩ সালে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৫৭ তম সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর সভাপতিত্বে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) গৃহীত হয়। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং বিশ্বব্যাপী তামাক বিরোধী আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ড.মোশাররফকে ‘World no tobacco award-2004’ পদকে ভূষিত করেন। ভূ-তত্ত্ব বিষয়ে স্ট্রাকচারাল এ্যানালাইসিসে তাঁর মৌলিক উদ্ভাবন ‘Hossains method of extension’ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান’, ‘প্লাবণ ভূমিতে মৎস্য চাষ: দাউদকান্দি মডেল’, ‘সংসদে কথা বলা যায়’, ‘এই সময়ের কিছু কথা’,’ ‘ফখরুদ।