জমকালো আয়োজনে সুবর্ণচর উপজেলা সমিতি চট্টগ্রাম’র ৮ম বর্ষপূর্তি ও মিলনমেলা-২০২৩ অনুষ্ঠিত

সময়ের নিউজ ডেস্কঃ জমকালো আয়োজনে সুবর্ণচর উপজেলা সমিতি চট্টগ্রাম’র ৮ম বর্ষপূর্তি ও মিলনমেলা-২০২৩ অনুষ্ঠিত নেচে গেয়ে সুরের মূর্চনায় আনন্দে মাতিয়ে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সুবর্ণচর উপজেলা সমিতি চট্টগ্রাম এর ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পারিবারিক মিলনমেলা।

করোনা মহামারীর কারনে দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া চট্টগ্রামস্থ সুবর্ণচরবাসীদের এই মিলনমেলায় একে অপরকে কাছে পেয়ে বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে মেতে উঠেন সকলে।

হৃদয়ে সুবর্ণচর, প্রাণে সুবর্ণচর এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চট্টগ্রামস্থ সুবর্ণচর উপজেলা সমিতির অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সুবর্ণমেলা-২০২৩ উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সুবর্ণচর উপজেলা সমিতির আয়োজনে মিলনমেলা,স্মরণিকা প্রকাশ, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও প্রীতি ভোজ বন্দর নগরী চট্টগ্রামের স্বাধীনতা কমপ্লেক্সে ৩রা ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম পর্বে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সকলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মজার মজার খেলাধুলার ইভেন্ট। পুরুষদের জন্য ছিলো ঝুঁড়িতে বল নিক্ষেপ,নারীদের মিউজিক্যাল চেয়ার, কিশোরদের আই.কিউ টেষ্ট,ছোট শিশুদের বিস্কুট দৌঁড় ও ব্যাঙ দৌঁড় প্রতিযোগিতা।

এরপর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের মধ্য দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয় সকলের জন্য। দ্বিতীয় পর্বে ছিল পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত. গজল ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা।

তারপর সমিতির পক্ষ থেকে গুণীজন সংবর্ধনা ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এসময় সমিতির পক্ষ থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন সমিতির সভাপতি,সাধারণ সম্পাদক ও অতিথিবৃন্দরা।

সুবর্ণচর উপজেলা সমিতির মিলনমেলা অনুষ্ঠানে নব নির্বাচিত সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপ-সচিব ও জীবন বীমা কর্পোরেশনের চট্টগ্রাম বিভাগের মহাব্যাবস্থাপক নুসরাত সুলতানা।

“সুবর্ণচর উপজেলা সমিতি চট্রগ্রাম” এর সভাপতি আবু জাফর মোঃ ওমর ফারুক এর সভাপতিত্বে, সাধারণ সম্পাদক মো: অহিদের রহমান ও তাজরিন তাবাস্সুম অন্বেষা’র সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন সমিতির প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন, গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপ-সচিব ও জীবন বীমা কর্পোরেশনের চট্টগ্রাম বিভাগের মহাব্যাবস্থাপক নুসরাত সুলতানা, উপদেষ্টা আব্দুল্লা আল মামুন কচি, সমিতির নির্বাচন পরিচালনা পরিষদের সদস্য-সচিব ড. আকবর হোসাইন, চট্টগ্রাম জেলার ডিবি ওসি নূর আহমেদ বাবুল, ১নং চরজব্বার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট ওমর ফারুক, ৩নং চরক্লার্ক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল বাশার ডিপ্টি, ২নং চরবাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রাজিব, ৫নং চরজুবলী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ খসরু, নোয়াখালী জেলা পরিষদ এর সদস্য আতিক উল্ল্যাহ সুজন, বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী ছায়েদুল হক ভুইয়া, উপমা’র নির্বাহী পরিচালক মো: রফিক উল্লাহ।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির উপদেষ্টা নুরুল আনোয়ার বকুল, সিনিয়র সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন ফারুক, সহ-সভাপতি মো: হারুনুর রশীদ, মো: আবুদুল্লাহ ফারুক, যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হোসেন, আব্দুল গণি, সাংগঠনিক সম্পাদক কেফায়েত উল্লাহ,প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুর করিম, এনামুল হক, অলি উদ্দিন, অর্থ-সম্পাদক এনামুল হক ভূঁইয়া, দপ্তর সম্পাদক মো: মনির উদ্দীন, মোঃ হেলাল উদ্দিন, এসআই নুর নবী, পুলিশ সদস্য মোঃ আলমগীর সহ চট্টগ্রামস্থ সুবর্ণচর উপজেলার শত শত সদস্য ও অতিথিবৃন্দ।

সমিতির প্রধান উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, প্রত্যেক বছর এধরনের মিলনমেলার আয়োজন করায় সুবর্ণচর উপজেলা সমিতির প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমি এই সমিতর একজন সাধারণ সদস্য হিসেবে এই সমিতি যেন ভালোভাবে কাজ করতে পারে এটিই আমরা চাই। সুবর্ণচর উপজেলা সমিতি যদি ভালোভাবে কাজ করে এবং প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে তাহলে আমরা যারা এতে করে চট্টগ্রামস্থ সুবর্ণচরবাসীরা ভালো থাকবে এবং তাদের বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।

গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপ-সচিব ও জীবন বীমা কর্পোরেশনের চট্টগ্রাম বিভাগের মহাব্যাবস্থাপক নুসরাত সুলতানা বলেন, আমি যখন সমাজসেবাতে কর্মরত ছিলাম তখন চট্টগ্রাম শহরের অনেক ভালো ভালো জায়গায় সমিতিতে অনেক সমস্যার কারণে রানিং করতে পারে না,ভালো কাজ তো দুরের কথা, সেখানে আপনারা সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছেন এবং নিজেদের সদিচ্ছায় শপথ গ্রহণ করেন।যদিও শপথ গ্রহণ করানোর কোন বাধ্যবাধকতা নেই, কিন্তু আপনারা নিজেরাই কমিটেড হন যে সুবর্ণচর ও সুবর্ণচরবাসীদের জন্য কাজ করে যাবেন। আপনাদের এই অনুভুতিকে আমি শ্রদ্ধা জানাই।

১নং চরজব্বার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট ওমর ফারুক বলেন, এই মিলনমেলায় উপস্থিত সুবর্ণচরবাসীদের সবার প্রতি আহবান জানাবো, আমরা এখানে একঘরের রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, কেউ বিএনপি করি, কেউ আওয়ামীলীগ করি, কেউ বিভিন্ন দল করি, আমি মনে করি আমরা এই মিলনমেলায় এসেছি সকল দলের সকল মতের সবাই একসাথে। আমি আহবান জানাবো সুবর্ণচরের যে যেখানে আছেন, সুবর্ণচরের শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় আমরা দলবদ্ধ হয়ে কাজ তরি। তাহলে সুবর্ণচর একটি আলোকিত সুবর্ণচর হবে।

৩নং চরক্লার্ক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল বাশার ডিপ্টি বলেন, পূর্বে চট্টগ্রামে আমাদের সুবর্ণচরের কেউ যদি বিপদে পরতো আমরা ঠিকানা পেতাম না কার কাছে যেতে হবে, কেউ অসুস্থ লোক হাসপাতালে ভর্তি হলে ঠিকানা খুঁজে পেতাম না কার দারস্থ হতে হবে, জনগণ আমাদের কাছে আসতো। এখন আমাদেরও ঠিকানা সাধারণের মানুষেরও ঠিকানা হলো এই সুবর্ণচর উপজেলা সমিতি।

সমিতির সভাপতি আবু জাফর মোঃ ওমর ফারুক বলেন, মহান আল্লাহ তাআলার কাছে অশেষ অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো শুকরিয়া আদায় করবো এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো আমাদের সুবর্ণচর উপজেলা সমিতির সকল সদস্যদের প্রতি। তারা এক বাক্যে এক নেতৃত্বে এবং এক সুরে কথা বলে আমাদের দিনব্যাপী এই আয়োজনে সকাল থেকে একটি নির্দিষ্ট সিস্টেমে সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করেছে, কোন ব্যত্যয় ঘটেনি, কোন দুই কথা নেই। সবাই মনভরে আনন্দ করেছে, আড্ডা দিয়েছে এটিই তো আমাদের সার্থকতা আমরা এটিই তো চাই। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের এই বন্ধন ইনশাআল্লাহ আরও সুদৃঢ় থেকে সুদৃঢ়তর হবে এবং এটা অব্যহত থাকবে। আপনাদের সমর্থন আমরা সবসময় প্রত্যাশা করি, যখনই কোন অনুষ্ঠান করি, নিমন্ত্রণ করলে আপনারা আসবেন। সুবর্ণচর সমিতি শুধু মিলনমেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সূবর্ণচর বাসীর সমৃদ্ধির জন্য কাজ করা। সুবর্ণচর উপজেলা সমিতি সুবর্ণচর বাসীর সুখে দুঃখে ছিলো এবং থাকবে।

সাধারণ সম্পাদক মো: অহিদের রহমান বলেন, আমরা যারা চট্টগ্রামে থাকি সুবর্ণচরের মানুষ, জীবন জীবিকার তাগিদে আমরা যারা আজকে এলাকা ছেড়ে এই শহরে নগরে আমরা থাকি, আমরা সবসময় চেষ্টা করি আমাদের এলাকায় যত মসজিদ মক্তব মাদ্রাসা স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠান রয়েছে সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য আমাদের লাইফ মেম্বার যারা রয়েছেন, কার্যকরী কমিটিতে যারা রয়েছেন সবাই এই সহযোগিতা করে থাকেন। ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা চালু থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি এবং আমি নিজেই এই জন্য একাত্মতাবদ্ধ।

মিলনমেলায় নিজ গ্রামের মানুষদের এক সাথে পেয়ে সবাই খুশিতে মেতে ওঠেন । এক সুযোগে একে অন্যের সুখ-দুঃখের খোঁজ খবর নিচ্ছে একাকার হয়ে। স্বাধীনতা কমপ্লেক্স কমিউনিটি সেন্টার জুড়ে যেন শুধু সুবর্ণচরের গুঞ্জন। এ যেন ব্যস্ততম চট্টগ্রাম শহরের বুকে একখন্ড প্রিয় সুবর্ণচর।

সব শেষে র্যাফেল ড্র ও সকল ইভেন্টের বিজয়ী প্রতিযোগীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। জমকালো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও নৃত্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় উক্ত অবিস্মরণীয় মিলনমেলা।