মাদক, ইভটিজিং, কিশোরগ্যাং সামাজিক এই তিন ব্যাধিসহ চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি ও বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, উপজেলায় সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে নিয়ে অভিভাবক সমাবেশ, সামাজিক ও রাজনৈতিক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালন করব। একইসাথে আমরা কিশোরগ্যাং অপরাধে যারা বেশি বেপরোয়া তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। তিনি আরও বলেন, ইভটিজিং ও মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সম্পূর্ণ জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। ইতিমধ্যে উপজেলায় মাদক সেবনের দায়ে আমরা ৩ জনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ড প্রদান করেছি। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও আমরা মাদকের বিরুদ্ধে আরও বড় অভিযান পরিচালনা করতে চাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরও বলেন, চুরি-ছিনতাই রোধে আমাদের পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে। তারা এ বিষয়ে আরও নজরদারি বাড়াবে। তিনি আরও বলেন, বন ও পরিবেশ ধ্বংস করতে যারা লিপ্ত। তাদেরকে কোন ছাড় নয়। আমাদের নৌ-পুলিশ, কোষ্ট গার্ড এবং জেলা প্রশাসন আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। যেখানেই সাগর থেকে বালু উত্তোলন, পাহাড় কাটা সেখানেই আমরা অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা ও দণ্ড প্রদান করব। কাউকে ছাড় নয়।
গ্রাম আদালত বিষয়ে ইউএনও বলেন, এখন যেহেতু চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যরা নেই। উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারাই পরিষদগুলোতে দায়িত্বে আছেন। আমাদের অফিসাররা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে জনগণের সেবায়। ওয়ারিশ সনদ, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদসহ সকল সনদ সেবা ও অন্যান্য মিমাংসা করা হচ্ছে। আমরা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করছি। এসময় ইউএনও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত শিল্প কারখানাগুলোতে নিরাপত্তা বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষষণ করেন। সেইসাথে অংশিজনেরা বিভিন্ন কন্টেইনার ডিপোর মহাসড়কে অবৈধভাবে পার্কিং ও ফলে সৃষ্ট যানজট, জনসাধারণের ভোগান্তি, বাসা বাড়িতে চুরি, মহাসড়কে ডাকাতি, ইভটিজিং বিষয়ে নানা তথ্য উত্থাপনের পর এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আইন হচ্ছে জনগণের জন্য৷ এখন সবকিছু রিফর্ম হচ্ছে। রাস্ট্রের নানা জায়গায় সংস্কার হচ্ছে। কাজেই আমরা জনগণের চাহিদাকে মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি। জনস্বার্থ বিরোধী কোন কাজ যেন না হয় সেজন্য আমরা সজাগ দৃষ্টি রেখেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব এবং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুরউদ্দিন রাশেদ, কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ, প্রাণিসম্পদ অফিসার মোছাম্মৎ তাহমিনা আরজু, উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনির হায়দার, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউল কাদের, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন চৌধুরী, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস মোস্তফা আলম সরকার, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম রহমান, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার লুৎফুন্নেসা বেগম, যুব উন্নয়ন অফিসার মো. তাজাম্মল হোসেন, জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৗশলী মো. রাশেদু্জ্জামান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার নুরুল আলম দুলাল, তথ্যসেবা কর্মকর্তা আসমাউল হুসনা তন্বী।
এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য হিসেবে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও খবরের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার এম কে মনির, উপকূলীয় বন বিভাগ, বন রেঞ্জ, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, নির্বাচন অফিস, সমবায়, আনসার ও ভিডিপি, হিসাবরক্ষণ ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রতিনিধিগণ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ।
সীতাকুণ্ড থানার অফিসার ইনচার্জ মো, মজিবুর রহমান বলেন, আমি সীতাকুণ্ডে যোগদানের পর থেকেই এই উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের একটি মোবাইল টীম ২৪ ঘন্টা কাজ করছে। মহাসড়কে ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই রোধে আমরা কাজ করছি। আমরা আমাদের তথ্য কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করছি। এসময় তিনি আরও বলেন, জনগণ ছাড়া পুলিশিং সম্ভব নয়। আমাদেরকে জনগণ সহযোগিতা করতে হবে। এই অপরাধগুলো নিয়ন্ত্রণে আমাদেরকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। জনগণের জন্যই আমাদের পুলিশিং। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করে, কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করে পুলিশিং করতে চায়। আমরা যদি সচেতন থাকি তাহলে অপরাধীরা কখনই সুযোগ পাবেনা। এসময় সীতাকুণ্ডকে চাঁদাবাজ, মাদক, ইভটিজিং, কিশোরগ্যাংমুক্ত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এজন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতার বিকল্প নেই। আমরা একটি পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। অবশ্যই আপনাদের সহযোগিতা পেলে আমরা একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও বাসযোগ্য সীতাকুণ্ড উপহার দিতে পারব। এসময় সদ্য সমাপ্ত দূর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে ও আননদমুখর পরিবেশে উদযাপনে পুলিশের ভূমিকার জন্য সকলে তার (ওসির) ভূয়সী প্রশংসা করেন।