
নগরের হিলভিউ আবাসিক এলাকার বার্মা কলোনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শরণার্থী হিসেবে এখানে আশ্রয় নেয় বহু মানুষ। সেই থেকে এখানকার বাসিন্দারা দিন এনে দিন খেয়ে জীবন পার করছে। প্রতিনিয়ত ভাত-কাপড়ের লড়াইয়ে ঘাম ঝরাতে হয় এখানকার মানুষদের। অধিকাংশ পরিবারের সন্তানদের পড়াশোনা করতেই হিমশিম খেতে হয়। অসুখ হলে ভালো ডাক্তার দেখানো, পরীক্ষা, নিরীক্ষা, ওষুধ এসব যেন তাদের কাছে আকাশ কুসুম কল্পনা। দিনের পর দিন চিকিৎসা ছাড়াই কাটিয়ে দেন এই এলাকার অনেকে। তাদের মুখে হাসি ফুটাতে নানা সামাজিক কাজ ও সমাজসেবার দ্বার খুলে দেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সাইফ। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী, অরাজনৈতিক সংগঠন সাইফুল ইসলাম সাইফ ফাউন্ডেশন।
বুধবার (১৬ জুলাই) জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী রক্তের গ্রপ নির্ণয় পরীক্ষা, চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প আয়োজন করা হয়। বার্মা কলোনী মোড়ে টিকা ও স্বাস্থ কেন্দ্রে সকাল আটটা থেকে শুরু হয় বিনামূল্যে চিকিৎসা। আশপাশ থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা আসতে থাকেন চক্ষু চিকিৎসা নিতে। বিভিন্ন বয়সের কলেজ ও স্কুল শিক্ষার্থীরা আসেন নিজেদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে।
“মুমূর্ষু রোগীর প্রাণের টানে, ‘এগিয়ে আসুন রক্তদানে” এই স্লোগানে আয়োজিত কর্মসূচীতে চিকিৎসা সেবা দেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. মো. রায়হান ইবনে রুহুল ও আই ফিজিশিয়ান অপ্টোম: মো. কফিল উদ্দিন মাহমুদ।
এতে সকাল আটটা থেকে নারী, পুরুষ ও শিশুরা ভিড় করেন। তিনটি কক্ষে সেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি কক্ষে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক রক্ত পরীক্ষা করেন। আর দুটিতে চক্ষু সেবা দেওয়া হয়। নারী ও পুরুষদের আলাদা কক্ষে সেবা দেওয়া হয়। মোট ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক সার্বিক সেবা মনিটরিং করেন। সব মিলিয়ে সহস্রাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবা নেন।
পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহীনের তত্ববধায়নে ও সাবেক মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম সাইফের নির্দেশনায় এই কর্মসূচীতে দুপুর পর্যন্ত সহস্রাধিক মানুষ সেবা গ্রহণ করেন। এদের কেউ চক্ষু সেবা নেন, কেউবা রক্তের গ্রুপ জানতে পেরে আনন্দিত।
ষাটোর্ধ্ব আবুল হোসেন জানান, আমি দীর্ঘদিন চোখের সমস্যায় ভুগছি। আয় কম তাই ডাক্তার দেখাতে পারছি না। সাইফুল ইসলাম সাইফ তার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এজন্য তার প্রতি দোয়া থাকবে।
রহিম আক্তার জানান, অনেক দিন ধরে চোখে কম দেখি এবং ঝাপসা দেখি। ডাক্তার দেখিয়ে বিষয়টি যে নিশ্চিত হবো কেন এমন হচ্ছে সেই সামর্থ্য নেই। অবশেষে আজ ডাক্তার দেখালাম। আমাকে ভালো মতো দেখেছেন ডাক্তার এটাই মনের আনন্দ।
আনজুমা খাতুন বলেন, আমাদের শুধু চিকিৎসা নয় চশমা, ওষুধ, ক্ষেত্রভেদে অপারেশনও করে দেবে ফাউন্ডেশন। স্কুল ছাত্রী নাজমা আক্তার বলেন, আগে কখনও রক্তের পরীক্ষা করতে পারিনি। জানতামও না গ্রুপ কি। আজকে পরীক্ষা করলাম এবং জানতে পারলাম আমার রক্তের গ্রুপ এ পজেটিভ। আমার সাথে আমার অনেক বান্ধবীরাও রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করেছে।
এই কর্মসূচীতে একাত্মতা পোষণ করে উপস্থিত হন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল মান্নান, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম খসরু, সাইফুল ইসলাম সাইফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রিন্সিপাল মোশাররফ হোসেন, ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মোমিন, আবুল হাশেম, ডা. রুহুল আমিন, প্রিন্সিপাল নূর নবী খন্দকার আকাশ, বিএনপির সদস্য সবুজ ইসলাম বাপ্পি, মো. সোহাগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সাইফুল ইসলাম সাইফ জানান, আমার এলাকার নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য এই স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্প আয়োজন করেছি। তারা সহজে চিকিৎসা সেবা পায় না। তাদের বেশিরভাগেরই নুন আনতে পানতা ফুরায়। সাইফুল ইসলাম সাইফ ফাউন্ডেশন থেকে তাদের সুখে-অসুখে থাকার চেষ্টা করা হয়। এর আগে আমরা শিক্ষা সহায়তা, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগকালিন সহায়তা, সামাজিক উন্নয়ন, ইফতার ও সাহরী বিতরণ, রক্তদানের আয়োজন, সচেতনামূলক কার্যক্রম, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের এলাকার মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কি হতে পারে। সাইফুল ইসলাম সাইফ আমাদের এলাকার মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। তার অবদান এই এলাকার মানুষ মনে রাখবে। আমরা চাই তিনি আরও নানামুখী উদ্যো গ্রগণ করুক।