
২০১৭ সাল বিপুল ভাই কে কম্পিউটারে লেখতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম এতো দ্রুত কিভাবে বাংলায় লেখছেন ?আপনি কি বিজয় কিবোর্ড ব্যবহার করে লেখেন ? উত্তরে মুচকি হেসে জবাব দিলেন আজ থেকে সাত বছর আগে বিজয় ব্যবহার জানতে হবে বিধায় পত্রিকা অফিসে চাকুরী হয়নি আমার।আমাকে বললেন অভ্র দিয়ে লেখি,অভ্র না হলে আমার এই জীবনে আর বাংলায় লেখা হতো কিনা জানি না। এরপর কম্পিউটারে আমি ৪৫ মিনিটের মধ্যে অভ্র লিখতে পারার কৌশল আয়ত্ত করার পর আমার খুশিটা যদি আপনাদের দেখাতে পারতাম।আমি ফিরে গিয়েছিলাম ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই দাবীতে ভাষা জন্য আন্দোলনকারী সেই সকল ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের কথায়।
ফেব্রুয়ারি আসলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে আন্দোলনের কথা, সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারসহ লাখো মানুষের মুখ। ভাষাকে অন্তরে নিয়ে এই মানুষগুলো জীবন দিয়েছেন। এত বছর সেই ভাষাতেই আমরা কথা বলি, মনের ভাব প্রকাশ করি, লিখতে পারি। কিন্তু সব জায়গায় কি লিখতে পারতাম? কম্পিউটারের কথা বলছি। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই লিখতে হলে বিজয় ব্যবহার করা হতো। সেই নিয়ম থেকে বের করে নিয়ে আসল ‘অভ্র’। আজ অভ্রতেই লেখা হয় অনেক জায়গায়। তবে এই অভ্রের জন্য বিনিময়ে কোনো টাকাই নেননি এর নির্মাতা। ভাষার জন্য ঠিক কতটা ভালোবাসা আর মমত্ববোধ থাকলে একজন মানুষ এই কাজটা করতে পারেন? মেডিকেলে পড়াকালীন ১৮ বছর বয়সী একজন তরুণের অনেক দিনের ভাবনার ফল, পরিশ্রম আর সাধনার এই অভ্র। ‘অভ্র’ যার আভিধানিক অর্থ ‘আকাশ’-শব্দটিও নির্মাতা মেহদী হাসান খুঁজে বের করেছিলেন অভিধান ঘেঁটেই। আকাশ যেমন সবার জন্য মুক্ত, তেমনি অভ্রও সবার জন্য মুক্ত হবে এমনটাই ভেবেছিলেন মেহদি হাসান খান। তেমনি ভাবে কম্পিউটারে একটি নিদিষ্ট কিবোর্ড ব্যবহার করে বাংলা লিখার প্রচলন তৈরী করেন বিজয়ের উদ্ভাবক মোস্তফা জব্বার। কারো অবদানকে ছোট করে দেখার অবকাশ নাই। বর্তমানে বাংলা ভাষাকে সহজেই লিখার যে আনন্দ তা সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে পরিলক্ষিত আজ। বায়ান্নর সেই ভাষাশহীদদের স্মরণে প্রতিষ্ঠা করা হয় একুশে পদক। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যোগ্য ব্যক্তিদের দেওয়া হচ্ছে এই একুশে পদক। একুশে পদক ২০২১ অনন্য অবদানের জন্য সকল একুশে পদক পাওয়া কৃতিমান ২৪ বিশিষ্ট নাগরিককে আমার শ্রদ্ধা,পরম ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। তৎমধ্যে আমাদের চট্টগ্রামের সাংবাদিকতায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাংবাদপত্র দৈনিক আজাদী’র সম্পাদক এম.এ.মালেক, সমাজসেবায় সংঘরাজ ড.জ্ঞানশ্রী মহাথের এবং শিক্ষায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড.গৌতম বুদ্ধ দাশ কে আমার এবং সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে কৃতিমান বিশিষ্ট নাগরিক ব্যক্তি মহাদয় কে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। চট্টগ্রামের ১২০০ বছরের পুরানো ইতিহাসের সাথে এ তিন গুনী বিশিষ্ট নাগরিকের সংযুক্তি আমাদের চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ করবে আমার বিশ্বাস।
আমার লেখার শুরুতে বলেছি আমি অভ্রকে যেদিন বুঝতে শিখেছি সেদিন থেকে মায়ের ভাষা বাংলায় লেখার আগ্রহ দিন দিন বাড়তে লাগলো।
বিজয় বায়ান্নো, অভ্র ভাষা হোক উন্মুক্ত একবিংশ শতাব্দীর ‘ভাষাসৈনিক’ মোস্তাফা জব্বার ও ডা: মেহদী হাসান খান মহান সৃষ্টির উদ্যোক্তার জন্য আজ আমরা বাংলায় দ্রুত লিখতে পারছি। সর্বোপরি অভ্র’র সাহায্যে লিখতে পারার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে বিজয়ের প্রতিষ্টাতা মোস্তাফা জব্বার স্যার এবং অভ্র’র নির্মাতা ডাঃ মেহেদী হাসান খান কে তাদের এ অনন্য অবদানের কথা সংলিস্ট মন্ত্রণালয় বিবেচনায় নিয়ে একুশে পদকে সম্মানিত করার দাবি উত্থাপনের যোক্তিক ও সঠিক মনে করছি। । আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিশ্বজুড়ে ভাষার বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং আমাদের গৌরবময় ৫২ ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের অহংকার। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক। শেষ করতে চাই আবদুল গাফফার চৌধুরীর ঐতিহাসিক একুশের গানের কথার সাথে –
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু ঝরা এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।’
লেখক: মুহাম্মদ সাজিদুল হক