সময়ের নিউজ ডেস্কঃ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস ২০২২ পালন করেছে বন্দরনগরীর সর্ববৃহৎ হাসপাতাল, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম। সেই উপলক্ষ্যে, এবছরের প্রতিপাদ্য “দ্য পাওয়ার অব সেভিং প্রেশাসটাইম’ বিষয়ে একটি সেমিনার আয়োজন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম-এর মহাব্যবস্থাপক ডা. ফজলে আকবর; এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম-এর নিউরোলজি বিভাগের সিনিয়র কলালটেন্ট ডা. হামিদুল হক; নিউরোলজি বিভাগ-এর কলালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন; নিউরোসার্জারি বিভাগ-এর সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কো-অর্ডিনেটর ডা. মো: আনিসুল ইসলাম খান; নিউরোলজি বিভাগ-এর সহযোগী কলসালটেন্ট ভা. এ. এম. সাফায়েত হোসেন প্রমুখ ।
সেমিনারে এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম-এর মহাব্যবস্থাপক ডা. ফজলে আকবর বলেন, “স্ট্রোক হলে এক মিনিটে প্রায় ২২ লক্ষ নিউরন মৃত্যবরণ করতে পারে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বলেন স্ট্রোক হলে রোগীদের জন্য প্রতিটি সেকেন্ডই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, স্ট্রোক হয়েছে বোঝামাত্র সময় নষ্ট না করে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বন্দরনগরীর সর্ববৃহৎ হাসপাতাল। অন্যান্য সকল রোগের মতো স্ট্রোকের রোগীদের সেরা সেবা নিশ্চিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নিউরোলজি বিভাগের সিনিয়র কঙ্গালটেন্ট ডা. হামিদুল হক বলেন, “স্ট্রোকের দুটি ধরণ সম্পর্কে আমরা অবগত এবং উভয় ক্ষেত্রেই উপসর্গ প্রায় এক। তাই সঠিক পরীক্ষা ছাড়া রোগের ধরণ নির্ণয় প্রায় অসম্ভব। স্ট্রোকে অনেকের জীবনই সম্পূর্ণ বদলে গেছে। তবে প্রাথমিক গাইডলাইন মোতাবেক চললে জটিল অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। সকলের প্রতি আমার আহ্বান, স্ট্রোক হলে অবহেলা না করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।”
নিউরোলজি বিভাগ-এর কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, “স্ট্রোকের কারণে রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীর শ্বাসনালি, শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্ত সঞ্চালন সচল রাখার (সিপিআর থেরাপি এক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী) চেষ্টা করতে হবে। রোগীকে একদিকে কাত করে বালিশ ছাড়া মাথা নিচু করে শোয়াতে হবে। চোখ ও চোখের প্রতিক্রিয়া বা সংকেতের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মুত্রথলির যত্ন নিতে হবে ও প্রয়োজনে ক্যাথেটার ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে ।”
নিউরোসার্জারি বিভাগ-এর সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কো-অর্ডিনেটর ভা. মো: আনিসুল ইসলাম খান বলেন, “স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি অন্যতম একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। অনেক সময় দেখা যায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল বা প্রান্তিক অঞ্চলগুলোয় ফিজিওথেরাপি নিয়ে জনমনে সচেতনতা খুবই কম। অনেক রোগীরই স্ট্রোকের পর হাত-পা বেঁকে যায় এবং বাকি জীবন এভাবেই থেকে যায়। সেসব রোগীদের জন্য ফিজিওথেরাপী ভীষণ উপকারী । অনেকে ভাবেন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কোন কাজে আসে না। তবে ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। তবে সঠিক স্থানে ও সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কোর্স সম্পূর্ণ করলে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা বেশি।”
নিউরোলজি বিভাগ-এর সহযোগী কনসালটেন্ট ডা. এ. এম. সাফায়েত হোসেন বলেন, “স্ট্রোক বিশ্বব্যাপি খুবই কমন একটি সমস্যা বা রোগ । একটি ভুল অনেকেই করেন যে, স্ট্রোক হচ্ছে হদযন্ত্রের কোনো সমস্যা। তবে সেটি ভুল। স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ । অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ-রক্তচাপ স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া ধূমপান, মাদক, দুশ্চিন্তা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সকলের প্রতি আমার আহ্বান, অস্বাস্ককর জীবনযাপন ত্যাগ করুন, স্ট্রোকমুক্ত সমাজ গড়ুন।”
সেমিনারে এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম থেকে চিকিৎসা প্রাপ্ত দুইজন স্ট্রোক রোগী উপস্থিত ছিলেন ছিলেন এবং এখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন বলে জানান।