
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে শিমুল গাছের ডালে ডালে পানকৌড়ির মেলা। এ গাছের ডালে যেন মেলার আসর বসিয়েছে শত শত পাখি। কখনও ফুড়ুত করে উড়াল দিচ্ছে আকাশে। বিকালের সোনালি রোদে গাছের ডালে ডালে পানকৌড়ির পালক জ্বলজ্বল করে। একটি গাছে একসঙ্গে এত পানকৌড়ি দেখে শত ব্যস্ততার মধ্যেও অনেক পথচারী একটু দাঁড়িয়ে চোখ জুড়িয়ে নেন। আর তা দেখে প্রাণ জুড়ায় ওই গাছের মালিক যাদব রায়ের। ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলা থেকে কাঁঠালডাঙ্গী যাওয়ার সড়ক ঘেঁষা কেউটান গ্রামে বাড়ি যাদব রায়ের। যাদব রায় বলেন, ‘পাখিদের সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব। আর এখানে পাখি আসে বলেই প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে কত মানুষ দেখতে আসে। দেখে ভালো লাগে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে শীতের মৌসুম কমে গেলে ওরা যখন চলে যায়, তখন বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আবার যখন ফিরে আসে তখন বুক ভরে যায়। পাখির কারণে ক্ষতি হলেও, সব ক্ষতি মেনে নিয়েছি।’
সরেজমিনে দেখা যায়, কুলিক নদীর পাশে সব গাছ ছাড়িয়ে মাথা উঁচু করে আছে একটি শিমুলগাছ। শিমুলগাছের ডালে ডালে শুধু পানকৌড়ি আর পানকৌড়ি। কত যে পানকৌড়ি, তার হিসাব নেই। পানকৌড়ির কলকাকলিতে মুখর চারদিক। আর এই দৃশ্য দেখতে ভিড় করেছে অনেক মানুষ।
এই পাখিগুলোর নিরাপদ অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে গাছটি। পাখিগুলোর কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। পাখিগুলো দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে ভিড় করছেন অগণন মানুষ। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, আগের মতো এবারে একটু কম দেখা মিলছে এই পাখিদের। কারণ ইদানীং কিছু মানুষ বন্দুক নিয়ে এসে পাখিগুলো শিকার করছেন। পাখিগুলো শিকার নিষেধ করা হলেও তারা কোনো কথা শোনে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেই সঙ্গে পানকৌড়ি পাখি শিকার বন্ধ করার দাবি জানান স্থানীয়রা। কেউটান গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইমলাম বলেন, রাতে পাখিগুলো শিমুল গাছটিতেই থাকে। সকাল হলেই পাখিগুলো বেরিয়ে পড়ে খাদ্যের খোঁজে। আবার সন্ধ্যা হলেই ফিরে আসে গাছটিতে। এই পানকৌড়ি পাখিগুলো শিমুল গাছটিকে তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে বাস করছে। এক সময় এ গাছটিতে প্রচুর পরিমাণে পাখি ছিল। কিন্তু পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্যের কারণে তার সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। পাখিপ্রেমী রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, পাখি আমাদের পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তাই পানকৌড়ি পাখিগুলোর নিরাপত্তা সহকারে পরিচর্যা করলে পাখির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। শিমুল গাছটি যেন নিরাপদে থাকতে পারে সেজন্য প্রশাসনকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলকান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখে। তাই পাখিদের প্রতি সকলকে সহনশীল হতে হবে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি পাখিগুলোর নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনিক তৎপরতা আরও জোরদার করা হবে বলে জানান তিনি।