সময়ের নিউজের ডেস্কঃ আগামী রবিবার পিরোজপুর জেলার বেকুটিয়ায় কঁচানদীর উপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে সেতু ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। এ সময় তিনি সেতুর দুই প্রান্তে পিরোজপুরের সদর উপজেলা ও কাউখালী উপজেলায় উপস্থিত অতিথিবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করবেন এবং বক্তব্য রাখবেন। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি সভাপতিত্ব করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চামেলী হল প্রান্ত থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রদূত। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী প্রকল্প বিষয়ে উপস্থাপনা করবেন এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় প্রান্তে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন প্রধানমন্ত্রী মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
পিরোজপুরের সেতুর পশ্চিম প্রান্তে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করবেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান ও পূর্ব প্রান্তে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন কাউখালীর ইউএনও মোছা. খালেদা খাতুন রেখা। পিরোজপুরে দুই প্রান্তে যে সকল অতিথিবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সাথে মতবিনিময় করবেন তাঁরা হলেন পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর সদর উপজেলা ও কাউখালী উপজেলা মধ্যবর্তী বেকুটিয়া নামক স্থানে রাজাপুর-নৈকাঠি-বেকুটিয়া-পিরোজপুর জেলা মহাসড়কটি কঁচা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন। কঁচানদীর প্রস্থতা প্রায় এক কিলোমিটার হওয়ায় এবং কোন সেতু না থাকায় ফেরী পারাপারে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লেগে যায়। বর্ষাকালে এ নদীতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায় ও নদীর স্রোত তীব্র আকার ধারণ করে, ফলে পারাপার সময় আরও বেড়ে যায়। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে ফেরী চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়। বিষয়টি অনুধাবন করে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০০ সালের ১০ জুন প্রথমে পিরোজপুরের একটি জনসভায় কঁচানদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ২০০১ সালে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে যায়।
পরবর্তীকালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসলে ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ পিরোজপুরে আরেকটি জনসভায় এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এপ্রিল ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার ও চীন সরকারের মধ্যে বেকুটিয়া নামক স্থানে ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৮ সালে ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। চার বছর মেয়াদে নির্মাণ কাজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উদ্যোগে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চার মাস বাকি থাকতেই নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে ২০২২ সালে ৪ সেপ্টেম্বর নবনির্মিত সেতুর উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারিত হয়।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু নামকরণ করে যান চলাচলের জন্য এ দিন মধ্যরাত থেকে উম্মুক্ত করা হচ্ছে। এ সেতু উম্মুক্ত করা হলে বরিশাল বিভাগের সাথে খুলনা বিভাগের নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ তৈরী হবে। ফলে পায়রা সমুদ্র বন্দরের সাথে মংলা সমুদ্র বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ যেমন স্থাপিত হবে, তেমনি বেনাপোল, ভোমরা, বাংলাবান্দা প্রভৃতি স্থলবন্দরের সাথে যোগাযোগ সহজতর হবে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে অত্র সেতু সংলগ্ন জেলা সমূহের সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের ব্যাপক প্রসার লাভ করবে। সেতুটি এ অঞ্চলের জনসাধরণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের পাশাপাশি নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে কৃষি, ব্যবসা বাণিজ্য, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রসার, চিকিৎসা লাভে সহজলভ্যতা সুযোগ তৈরী করবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রে কুয়াকাটা সাগর সৈকত, সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের যাতায়াতে বিশেষ সুবিদা সৃষ্টি করবে।
সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক