
চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে লন্ডন ভিত্তিক একটি অ্যাপস থেকে কিউআরকোড বসিয়ে নকল ওয়ারিশ সনদ নিয়ে তা উপজেলা ভূমি অফিসের নামজারিতে সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে পাঁচ জনের একটি প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে।
প্রতারক চক্রটি শিকলবাহা ইউনিয়ন পরিষদের একটি প্রকৃত ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করে তাঁতে ওয়ারিশ সংখ্যা বৃদ্ধি করে পুনরায় কিউআরকোড বসিয়ে আনুমানিক ২০-২৫ লাখ টাকার জমির খতিয়ান পেতে নয়-ছয় করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। কিন্তু এসিল্যাণ্ডের বিচক্ষণতায় তাদের জাল জালিয়াতি ধরা পড়ে।
এদের মধ্যে তিন জন মহিলা আর দুজন পুরুষ। এরা সকলের নামে সম্প্রতি জমিটি ই-নামজারি পেতে কর্ণফুলী উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন করেছেন বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি শিকলবাহা ইউনিয়নের প্রধান সড়কের পাশের একটা জমি পাঁচ জনের নামে নামজারি করার জন্য আবেদন পড়ে। জমির নামজারি আবেদনের (৫০৫২) সাথে শিকলবাহা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া ওই চক্রের দেওয়া দুটি ওয়ারিশ সনদে নিজ দপ্তরের সিল স্বাক্ষর করে সত্যায়িত করে উপজেলায় প্রস্তাব পাঠান।
কিন্তু ফাইলটি এসিল্যাণ্ডের সামনে আসলে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তিনি কিউআরকোডটি স্ক্যান করে দেখেন। এতেই এসিল্যাণ্ডের সামনে জালিয়াতির চিত্র নজরে পড়ে। কেননা, স্বভাবতই ইউনিয়ন পরিষদ যে ওয়ারিশ সনদগুলো সরবরাহ করে থাকেন। সে সব সনদের কিউআরকোড স্ক্যান করলে প্রত্যয়ন লিঙ্ক প্রবেশ করবে এক্সপ্লোর আইটি কারিগরি সহযোগিতায় নির্মিত সনদ-প্রত্যয়ন ব্যবস্থাপনা সিস্টেম প্রত্যয়ন ওয়েব সাইটে।
যেখানে স্পষ্ট ভাবে কর্ণফুলী ডট ওআরজি ওয়েব সাইট লিখা আসবে। কিন্তু প্রতারক চক্রের সরবরাহ করা ওয়ারিশ সনদের কিউআরকোড স্ক্যান করলে লিঙ্ক নিয়ে যায় লন্ডনের মি-কিউআর ডটকমে। আর যে ফটোকপি ওয়ারিশ সনদে কিউআরকোড বসানো হলো, তাতে ওয়ারিশ দেখা মিলে পাঁচ জনের। কিন্তু কোড স্ক্যান করলে যে লিঙ্কে সনদ উপস্থাপিত হয় সেখানে দেখা মিলে সাত জন ওয়ারিশ।
এতে দুই সনদে দুই ধরনের তথ্য। আরেক সনদে অর্ধেক কিউআরকোড। সহকারি কমিশনারের চোখে এসব নানা অসঙ্গতি নজরে আসে। পরে তিনি ওয়ারিশ সনদ দুটির বিষয়ে সত্যতা জানতে শিকলবাহা ইউপি চেয়ারম্যান এর কাছে একটি চিঠি প্রেরণ করেন।
যে চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘চলমান নামজারি মামলা নম্বর ৫০৫২/২৩-২৪। এতে আবেদনকারী শিকলবাহা আলম মেম্বার বাড়ীর হোছনেয়ারা বেগম, দিদারুল ইসলাম লিটন, নারগিছ আকার মুক্তা, সাতকানিয়া মাইজপাড়ার ফারজানা আক্তার পুতুল, জাহেদুল ইসলাম নামজারির আবেদন করেন।
আবেদনকারীগণ গত ২৭ ফেব্রুয়ারী তারিখের ১০২০৩৯ নম্বর ওয়ারিশ সনদ মূলে ইস্যুকৃত শিকলবাহার মোহাম্মদ মিয়া স্যারাং এর ছেলে নুর মোহাম্মদের একটি ওয়ারিশ সনদ দাখিল করেন। একই তারিখের ১০০৩১৪ নং সনদমূলে আরেকটি ওয়ারিশ সনদে শিকলবাহার আবদুল ছৈয়দের ছেলে নুর মোহাম্মদ এর ওয়ারিশ সনদ দাখিল করেন।
কিন্তু কিউআর কোড স্ক্যানিং এর মাধ্যমে যাচাই করতে গেলে ওয়ারিশসনদ সমূহে গরমিল লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং দাখিলকৃত ওয়ারিশ সনদ সমূহের সঠিকতা ও সত্যতা যাচাইপূর্বক ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণে ইউপি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানান কমিশনার।’
চিঠির প্রতি উত্তরে শিকলবাহা ইউনিয়ন পরিষদ জানান, ‘শিকলবাহা এলাকার আলম মেম্বার বাড়ীর মোহাম্মদ হারুন ও নুর মোহাম্মদ বিগত ২৭ ফেব্রুয়ারী ইস্যুকৃত স্মারক নং-১০২০৩৯ ও ১০০৩১৪ ওয়ারিশ সনদ দুইটির মধ্যে প্রথমটি সঠিক ও দ্বিতীয়টি সঠিক নয়।’
পরিষদ লিখিত ভাবে আরও জানিয়েছেন, ‘গত ২৭ ফেব্রুয়ারীতে ইস্যুকৃত ১০২০৩৯ স্মারকের ওয়ারিশ সনদটি তাঁর পরিষদ থেকে ইস্যু করা হয়। আর একই তারিখ দেখানো ১০০৩১৪ স্মারকের সনদটি পরিষদ থেকে ইস্যু করা হয়নি। যেটি, ছিলো নকল।’
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিকলবাহা ইউপি সচিব আব্দুল কাইয়ুমও। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, তিনটি সনদের নিচে স্পষ্ট ভাবে লিখা রয়েছে স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুনের তদন্ত ও সুপারিশক্রমে উক্ত ওয়ারিশ সনদ সুপারিশ করা হলো।
এ বিষয়ে তিনটি সনদ দেখে শিকলবাহার ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তিনটি ওয়ারিশ সনদ নকল। তিনি কোন এ ধরনের ওয়ারিশ সনদ কাউকে দেননি। বরং তিনি নুর মোহাম্মদ এর একটি ওয়ারিশ সনদ তাঁর ছেলে সোলায়মান কে প্রদান করেছেন। যার স্মারক নম্বর ছিলো-১০৫২২১। তাতে স্ত্রী, পুত্র ও কণ্যা মিলে ওয়ারিশ ছিলো মোট ৯ জন।’
পরে শিকলবাহা ইউপি সচিব আব্দুল কাইয়ুমের সাথে পুনরায় যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয় প্রকৃত ওয়ারিশ সনদ অনলাইন সার্ভারে